বস্তুর ওজন অভিকর্ষজ ত্বরণ g এর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং যে সকল কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন ঘটে সে সকল কারণে বস্তুর ওজনও পরিবর্তিত হয়। বস্তুর ওজন বস্তুর মৌলিক ধর্ম নয়। স্থানভেদে বস্তুর ওজনের পরিবর্তন হয়। যে সকল কারণে ওজনের পরিবর্তন হয় নিচে তা বর্ণনা করা হলো।
(ক) ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে : পৃথিবীর আকৃতি ও আহ্নিক গতির জন্য বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয়।
(১) পৃথিবীর আকৃতির জন্য : পৃথিবী সুষম গোলক না হওয়ায় পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের সকল স্থান সমদূরে নয়। যেহেতু g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের উপর নির্ভর করে, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে g এর মানের পরিবর্তন হয়। বিষুবীয় অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় g এর মান সবচেয়ে কম (৯.৭৮ মিটার/সেকেন্ড২)। সুতরাং বিষুবীয় অঞ্চলে কোনো বস্তুর ওজন সবচেয়ে কম হয়। বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যত যাওয়া যায়, ব্যাসার্ধ তত কমতে থাকে এবং g এর মান বাড়তে থাকে (৯.৮৩ মিটার/সেকেন্ড২) । এর ফলে বস্তুর ওজনও বাড়তে থাকে। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম হওয়ায় g এর মান মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। ফলে ওজনও সবচেয়ে বেশি হয়।
(২) পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য : পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য অভিকর্ষজ ত্বরণ বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মে অঞ্চলের দিকে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বস্তুর ওজনও বৃদ্ধি পায়।
(খ) ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতর কোনো স্থানে : ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও তত কমতে থাকে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় বস্তুর ওজনও তত কমতে থাকে। এই কারণে পাহাড় বা পর্বতশীর্ষে বস্তুর ওজন কম হয়।
(গ) পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোনো স্থানে : ভূপৃষ্ঠ থেকে যত নিচে যাওয়া যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ততই কমতে থাকে। এর ফলে পৃথিবীর যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায় বস্তুর ওজন তত কমতে থাকে। এ কারণে খনিতে কোনো বস্তুর ওজন কম হয়। পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূন্য। সুতরাং পৃথিবীর কেন্দ্রে যদি কোনো বস্তুকে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে বস্তুর উপর পৃথিবীর কোনো আকর্ষণ থাকবে না, অর্থাৎ বস্তুর ওজন শূন্য হবে।